ঢাকা ১২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত: জাতিসংঘ

অপরাধদৃষ্টি নিউজ
  • আপডেট সময় : ১২:১৯:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / 7

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরেও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৭ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। প্রতিষ্ঠানটি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং গাজার শিশুদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। শনিবার (২২ নভেম্বর) আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পিরেস জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক নবজাতক শিশু। এর আগের দিনও ইসরায়েলি হামলায় আরও সাত শিশু নিহত হয়।

পিরেস বলেন, এটি যুদ্ধবিরতির সময় ঘটছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এরা কেবল সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য নয়— প্রতিটি শিশু একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন, একটি জীবন নিয়ে ছিল। হঠাৎ করে অব্যাহত সহিংসতার কারণে সব শেষ হয়ে গেছে।

ইউনিসেফের আগের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৪ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু হতাহত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৪৭৫ জন ফিলিস্তিনি শিশু আজীবন পঙ্গুত্ব বয়ে আনবে এমন আঘাত পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি, পোড়া ক্ষতসহ অন্যান্য গুরুতর শারীরিক ক্ষতি।

সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজা এখন ‘আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিশু অঙ্গহানি-বহুল অঞ্চলে’ পরিণত হয়েছে।

খাদ্য সংকটও শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বহু শিশু অপুষ্টি ও ক্ষুধাজনিত জটিলতায় মারা গেছে বলে বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজাজুড়ে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, সেনাদের ওপর হামলার জবাবে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে হামাস এই দাবি অস্বীকার করে এটিকে ‘গণহত্যা পুনরায় শুরু করার স্পষ্ট ইঙ্গিত’ বলে অভিহিত করেছে।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, তাদের চিকিৎসকরা সাম্প্রতিক হামলায় গুলিবিদ্ধ ও খোলা হাড় ভাঙাসহ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বহু নারী ও শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছেন। গাজা সিটির একটি মোবাইল ক্লিনিকে কর্মরত নার্স জাহের জানান, তারা এক নারীকে পায়ের গুরুতর আঘাত এবং একজন নয় বছরের মেয়েকে মুখের গুলিবিদ্ধ ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন।

এদিকে ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধে গাজায় শীতের মৌসুমে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী—বিশেষ করে তাঁবু, কম্বল, ওষুধ—গুরুতরভাবে সংকট সৃষ্টি করেছে। ইউনিসেফ বলছে, বহু শিশু খোলা আকাশের নিচে, বৃষ্টিভেজা অস্থায়ী আশ্রয়ে শীতের তীব্র ঠান্ডা সহ্য করছে।

ইউনিসেফের মুখপাত্র পিরেসের মতে, গাজার শিশুদের জন্য বাস্তবতা নির্মম ও স্পষ্টত তাদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। তিনি বলেন, শীতের আগমন তাদের জন্য নতুন হুমকি। হিটার নেই, পর্যাপ্ত কম্বল নেই—শিশুরা রাতভর কাঁপছে ঠান্ডায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

eighteen + 14 =

ট্যাগস :

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর ৬৭ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত: জাতিসংঘ

আপডেট সময় : ১২:১৯:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার পরেও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৭ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। প্রতিষ্ঠানটি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং গাজার শিশুদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। শনিবার (২২ নভেম্বর) আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পিরেস জানান, নিহতদের মধ্যে রয়েছে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক নবজাতক শিশু। এর আগের দিনও ইসরায়েলি হামলায় আরও সাত শিশু নিহত হয়।

পিরেস বলেন, এটি যুদ্ধবিরতির সময় ঘটছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এরা কেবল সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য নয়— প্রতিটি শিশু একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন, একটি জীবন নিয়ে ছিল। হঠাৎ করে অব্যাহত সহিংসতার কারণে সব শেষ হয়ে গেছে।

ইউনিসেফের আগের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৪ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু হতাহত হয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৪৭৫ জন ফিলিস্তিনি শিশু আজীবন পঙ্গুত্ব বয়ে আনবে এমন আঘাত পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি, পোড়া ক্ষতসহ অন্যান্য গুরুতর শারীরিক ক্ষতি।

সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজা এখন ‘আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিশু অঙ্গহানি-বহুল অঞ্চলে’ পরিণত হয়েছে।

খাদ্য সংকটও শিশুদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বহু শিশু অপুষ্টি ও ক্ষুধাজনিত জটিলতায় মারা গেছে বলে বিভিন্ন সংস্থা অভিযোগ করছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজাজুড়ে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, সেনাদের ওপর হামলার জবাবে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে হামাস এই দাবি অস্বীকার করে এটিকে ‘গণহত্যা পুনরায় শুরু করার স্পষ্ট ইঙ্গিত’ বলে অভিহিত করেছে।

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, তাদের চিকিৎসকরা সাম্প্রতিক হামলায় গুলিবিদ্ধ ও খোলা হাড় ভাঙাসহ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত বহু নারী ও শিশুকে চিকিৎসা দিয়েছেন। গাজা সিটির একটি মোবাইল ক্লিনিকে কর্মরত নার্স জাহের জানান, তারা এক নারীকে পায়ের গুরুতর আঘাত এবং একজন নয় বছরের মেয়েকে মুখের গুলিবিদ্ধ ক্ষত নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন।

এদিকে ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধে গাজায় শীতের মৌসুমে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী—বিশেষ করে তাঁবু, কম্বল, ওষুধ—গুরুতরভাবে সংকট সৃষ্টি করেছে। ইউনিসেফ বলছে, বহু শিশু খোলা আকাশের নিচে, বৃষ্টিভেজা অস্থায়ী আশ্রয়ে শীতের তীব্র ঠান্ডা সহ্য করছে।

ইউনিসেফের মুখপাত্র পিরেসের মতে, গাজার শিশুদের জন্য বাস্তবতা নির্মম ও স্পষ্টত তাদের জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। তিনি বলেন, শীতের আগমন তাদের জন্য নতুন হুমকি। হিটার নেই, পর্যাপ্ত কম্বল নেই—শিশুরা রাতভর কাঁপছে ঠান্ডায়।