ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুলিবিদ্ধ পথচারীদের পানি খাওয়াতে গিয়ে গুলিতে চোখ হারায় শিশু ইশান

অপরাধ দৃষ্টি নিউজ
  • আপডেট সময় : ১১:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / 37
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

৫ আগস্ট দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করলেও ঢাকার বেশ কিছু স্থানে পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়ে। এর মধ্যে উত্তরা পূর্ব থানার সামনেও ছাত্র–জনতার ওপর গুলি ছোড়া হয়। সেখানে এক শিশুর গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারানোর হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তার বাবা।

ওই শিশুর নাম ইশান সিকদার (১৩)। সে টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন বিদ্যানিকেতনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গুলিতে তার বাঁ চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ইশান মা–বাবার সঙ্গে ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকে। তার বাবা বাবুল হাওলাদার একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের উত্তর মানপাশা গ্রামে। গত ৩০ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক আয়োজিত জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণসভায় উপস্থিত ইশান সিকদার ও তাঁর বাবা বাবুল সিকদার সেই দিনের বিভীষিকার কথা তুলে ধরেন।

বাবুল সিকদার  বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানের বাঁ চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। চিকিৎসকেরা তাঁর চোখে কৃত্রিম চোখ লগিয়ে দিয়েছেন। ছেলের চিকিৎসায় আমার পেশায় সময় দিতে না পারায় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকায় বাসাভাড়া দিতেও পারছি না।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাবুল সিকদার বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পরে আমার ছেলে বাসা থেকে বিজয় মিছিলে যায়। কিন্তু তখনো উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ বেলা তিনটা পর্যন্ত ছাত্র–জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সেদিন থানার সামনে তিনজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে পানির জন্য আর্তনাদ করছিলেন। আমার ছেলে বন্ধুদের নিয়ে তাঁদের পানি খাওয়াতে যায়। এ সময় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি তার নাক ভেদ করে বাঁ চোখে বিদ্ধ হয়ে চোখের মণিতে লাগে। পরে সেখান থেকে তাকে পথচারীরা বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে দুই দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাঁ চোখে কৃত্রিম চোখ লগিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল চিকিৎসায় আমার সব পুঁজি শেষ হয়ে এখন আমি ঋণগ্রস্ত। আমি কয়েক লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছি। আমার নিজের পেশা স্যানিটারির কাজেও যেতে পারি না। সব সময় ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। এখনো ছেলেটি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে।’

চিকিৎসকেরা ইশানের বাঁ চোখে একটি কৃত্রিম চোখ লাগিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা
চিকিৎসকেরা ইশানের বাঁ চোখে একটি কৃত্রিম চোখ লাগিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবাছবি: সংগৃহীত

ইশানের মা পাপিয়া বেগম বলেন, ‘কোনো দিনই তার ছেলের চোখ ভালো হবে না। ছেলেটির চিকিৎসায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকার কোনো অর্থসহায়তা দেয়নি। এমনকি তাঁদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি।’

জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের কাছে দেশের মানুষ চিরঋণী হয়ে থাকবেন মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান  বলেন, যাঁরা চোখ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। সব নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

গুলিবিদ্ধ পথচারীদের পানি খাওয়াতে গিয়ে গুলিতে চোখ হারায় শিশু ইশান

আপডেট সময় : ১১:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

৫ আগস্ট দুপুরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করলেও ঢাকার বেশ কিছু স্থানে পুলিশ ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়ে। এর মধ্যে উত্তরা পূর্ব থানার সামনেও ছাত্র–জনতার ওপর গুলি ছোড়া হয়। সেখানে এক শিশুর গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখ হারানোর হৃদয়বিদারক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তার বাবা।

ওই শিশুর নাম ইশান সিকদার (১৩)। সে টঙ্গীর সিরাজ উদ্দিন বিদ্যানিকেতনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। গুলিতে তার বাঁ চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ইশান মা–বাবার সঙ্গে ঢাকার উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরে থাকে। তার বাবা বাবুল হাওলাদার একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। তাঁদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের উত্তর মানপাশা গ্রামে। গত ৩০ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক আয়োজিত জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্মরণসভায় উপস্থিত ইশান সিকদার ও তাঁর বাবা বাবুল সিকদার সেই দিনের বিভীষিকার কথা তুলে ধরেন।

বাবুল সিকদার  বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তানের বাঁ চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা আর নেই। চিকিৎসকেরা তাঁর চোখে কৃত্রিম চোখ লগিয়ে দিয়েছেন। ছেলের চিকিৎসায় আমার পেশায় সময় দিতে না পারায় আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকায় বাসাভাড়া দিতেও পারছি না।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাবুল সিকদার বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পরে আমার ছেলে বাসা থেকে বিজয় মিছিলে যায়। কিন্তু তখনো উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ বেলা তিনটা পর্যন্ত ছাত্র–জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সেদিন থানার সামনে তিনজন পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে পানির জন্য আর্তনাদ করছিলেন। আমার ছেলে বন্ধুদের নিয়ে তাঁদের পানি খাওয়াতে যায়। এ সময় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি তার নাক ভেদ করে বাঁ চোখে বিদ্ধ হয়ে চোখের মণিতে লাগে। পরে সেখান থেকে তাকে পথচারীরা বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে দুই দিন পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাঁ চোখে কৃত্রিম চোখ লগিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল চিকিৎসায় আমার সব পুঁজি শেষ হয়ে এখন আমি ঋণগ্রস্ত। আমি কয়েক লাখ টাকা দেনা হয়ে গেছি। আমার নিজের পেশা স্যানিটারির কাজেও যেতে পারি না। সব সময় ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়। এখনো ছেলেটি অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছে।’

চিকিৎসকেরা ইশানের বাঁ চোখে একটি কৃত্রিম চোখ লাগিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবা
চিকিৎসকেরা ইশানের বাঁ চোখে একটি কৃত্রিম চোখ লাগিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার বাবাছবি: সংগৃহীত

ইশানের মা পাপিয়া বেগম বলেন, ‘কোনো দিনই তার ছেলের চোখ ভালো হবে না। ছেলেটির চিকিৎসায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকার কোনো অর্থসহায়তা দেয়নি। এমনকি তাঁদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি।’

জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের কাছে দেশের মানুষ চিরঋণী হয়ে থাকবেন মন্তব্য করে জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান  বলেন, যাঁরা চোখ হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। সব নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।