সোহাগ হত্যা মামলার এজাহার নিয়ে ‘কারসাজি’ করা হয়েছে, অভিযোগ স্বজনদের

- আপডেট সময় : ০১:৪৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
- / 7
ঢাকার মিডফোর্ড এলাকায় পাথর ছুঁড়ে পৈচাশিকভাবে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জড়িতদের নাম পুলিশের বিরুদ্ধে সুকৌশলে বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
শনিবার (১২ জুলাই) গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় এ অভিযোগ করে নিহতের পরিবার।
সোহাগের স্বজনরা জানান, মামলা দায়েরের আগে এজাহারের জন্য লেখা একটি অভিযোগপত্র পুলিশ তাদের পড়ে দেখার সুযোগ করে দিলেও পরবর্তীতে এজাহারের জন্য যে অভিযোগপত্রে পুলিশ বাদীর স্বাক্ষর নিয়েছে, তাতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ৩ জন আসামির নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এমন ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
যদিও পুলিশের দাবি, এজাহার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। বাদী মামলার জন্য যে অভিযোগ দিয়েছেন, সেটিই পুলিশ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেছে।
এ দিকে নিহত সোহাগের স্বজনরা মামলার এজাহারের জন্য লেখা দুটি অভিযোগপত্রের কপি গণমাধ্যমকে দেখিয়েছেন।
এর মধ্যে একটি কপিতে ১৭ নম্বর আসামির হিসেবে আ.লতিফ মোল্লার ছেলে কাইউম মোল্লা (৪৫), ১৮ নম্বর আসামি হিসেবে হাবিবুর রহমান হবির ছেল রাকেশ (৩৫) এবং ১৯ নম্বর আসামি হিসেবে রহিম (৩৬) এর নাম উল্লেখ করা রয়েছে।
কিন্তু পুলিশ এজাহার হিসেবে যে অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছে, তাতে এ ৩ জনের নাম নেই। এ ছাড়াও মামলার এজাহারের ১৯ নম্বর আসামি জাফর আলী হাওলাদারের ছেলে আনিচুর রহমান হাওলাদারের (৪০) নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আনিচুর রহমান হাওলাদারের নাম মামলার এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আগে নিহতের স্বজনদের পড়ে দেখার জন্য যে অভিযোগপত্রটি দেওয়া হয়েছিল, তাতে উল্লেখ ছিল না।
এ বিষয়ে নিহত সোহাগের ভাগ্নি বিথি বলেন, বুধবার যখন এ ঘটনা ঘটে আমরা তা সন্ধ্যায় শুনতে পাই। পরে রাত সাড়ে ১১টায় রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানায় পৌঁছাই। ওই সময় পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা নেয়া হয়নি। পরে আমার মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। মামলা যখন লেখে ওনারা (পুলিশ) ঠিকঠাক মতোই লেখেন। ১৭, ১৮, ১৯ – এ ৩ আসামি ঠিক ছিল। ওইখানের ওসি মনিরুজ্জামান মনির আমাকে মামলার কপিটি পড়তে বলেন।
আমাকে একটি কলম দিয়ে তিনি বলেন, যখন যেখানে গ্যাপ, যেটা লাগবে, তোমার যেটা মনে হয়েছে তথ্য লাগবে – তুমি নিজে থেকে সেটা লিখবে, তারপর আমরা সেটা সংশোধন করব। আমি তখন চালাকি করে ওই কপিটির ছবি ফোনে তুলে রাখি। এরপর আমি ওই কপিটি পড়ি। এরপর আমি প্রশ্ন করি – যখন আমার মামাকে মারা হয়েছে, তখনতো অস্ত্র ছিল প্রত্যেকের হাতে এবং অস্ত্র দিয়েও আমার মামাকে আঘাত করা হয়ে, সেটা কেন লিখলেন না আপনারা? তখন ওসি বলেন, এটা আমরা সংশোধন করবো। কিন্তু ওনারা আগেই এটা সংশোধন করে রাখছিল ওনাদের নিজেদের মতো।
তিনি আরও বলেন, আমার মা প্রথম যে কপিটা ছিল, ওইটায় তার সিগনেচার দিতে হতো, যেহেতু বাদী সে। কিন্তু সিগনেচার ওইটায় না নিয়ে তারা নিজেদের মতো যে সাজানো হয়েছে, তিনটা আসামি ১৭, ১৮, ১৯ নম্বর আসামি, প্রথম যে কপিটা ছিল ওইটা ঠিকঠাক ছিল। দ্বিতীয়বার যেটা রেডি করা হয়েছে, তিনটা আসামির নাম কেটে দেয়া হয়েছে। এবং অন্য যারা এটার সাথে সম্পৃক্তই না, তাদের নাম জড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ওইখানে আমার মা না বুঝে সিগনেচারটা করে। এবং যারা মূল হোতা, মূল আসামি – যারা এ ঘটনার সম্পৃক্ত আছে সরাসরি, তাদের না দিয়ে যারা জানেই না কিছু, তাদের দেওয়া হয়েছে। এবং মামলাটিকে অনেক হালকা করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এবং মামলা নিতে চাচ্ছিল না। আমার মা বাদী, উনি ঢাকা চলে গেছেন এ মামলার কারণে। অনেক ঝামেলা করতেছে ওনারা (পুলিশ)। যে, ফিফটি ফোর না কি মামলা হয়ে যাবে, আসামি ছাড়া পেয়ে যাবে। চালান করে দেবে – এই বিভিন্ন রকম কথা শুরু করছে। বুধবার ভোররাত ৪টার দিকে টাইপিং করা হয়েছে। পরের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে সাড়ে এগারোটার সময় কপিটা আমাকে দেওয়া হয়। আমি সাড়ে ১১টার সময় আমার ফোনে ওটা ক্যাপচার করি।
এ বিষয়ে নিহত সোহাগের বোন ও হত্যা মামলার বাদী মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ভাই মারা যাওয়ার কারণে আমার হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। আমি কপিটি আমার মেয়েকে দেখিয়েছি। আমি যখন সই করেছি, তখন মনে করেছি, আসামির নাম আছে। কিন্তু পরে দেখা গেল যে, না আসামির নাম নাই। এখানে একটা পলিটিক্স করা হয়েছে। ওখানে যারা প্রকৃত দোষী, ৩ জনই বাদ পড়েছে। যারা মেইন হোতা, ওরাই বাদ পড়ছে। আমার মেয়ে যে কাগজটা দেখেছে, ওটায় স্বাক্ষর নেয়নি। নিয়েছে অন্য আরেকটি কাগজে স্বাক্ষর।
এ বিষয়ে ঢাকার কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এজাহারতো তারা দিয়েছে, এজাহার কি আমরা করছি? এজাহার চেঞ্জ করার কোনো সুযোগই নেই। তারা যেটা এজাহার দিয়েছে, আমরা সেটাই মামলা রেকর্ড করেছি। তারা কি অশিক্ষিত? তারা কি মূর্খ? কিছুই নয়। আন্দাজে একটা কথা বলে। তারা শিক্ষিত, তারা ১০ জন, ২০ জন আসে একসঙ্গে দেখতে। এখন এটা বললে হবে?
তিনি আরও বলেন, এমনতো নয় যে, তারা অশিক্ষিত মানুষ, পড়েনি, দেখেনি। তারা পড়ছে, দেখছে, সব জেনেশুনে তাদের বক্তব্য মতো সেটা এজাহার করছে। এখানে আমাদের কিছু বলার নাই। আর আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দেখে সমস্ত আসামি শনাক্ত করছি, ধরার চেষ্টা করছি।
এ দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত চাঁদাবাজির কোনো বিষয় আমাদের জানা নাই। আমরা শুধু জেনেছি, এটা পারস্পরিক একটা দ্বন্দ্বের বিষয়। এ ব্যবসাটা (ভাঙারির ব্যবসা) তারা কিছুদিন একসঙ্গে করেছে। কিন্তু একপর্যায়ে ব্যবসার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতিতে এ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে।