ঢাকা ০৬:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিজে ৮০ শতাংশ পুড়েও ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচালেন শিক্ষিকা মাহরিন

অপরাধ দৃষ্টি নিউজ
  • আপডেট সময় : ১২:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • / 81

বিমান বিধ্বস্তের পর আগুনের মধ্যে ক্লাসরুমের ভেতর থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের একে একে বাইরে নিয়ে আসেন মাইলস্টোন কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী (৪২)। প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে বাইরে বের করে আনতে পারলেও নিজে সময়মতো বের হতে পারেননি। মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন তিনি।

সোমবারের (২১ জুলাই) এই ঘটনায় উদ্ধার করে তাকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান।

এরপর মাহরিন চৌধুরীর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে লেখেন, মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন।

তিনি আরও লিখেছেন, মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন মাহরিন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন। আজ আপনারা দয়া করে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন। তিনি তার দুই ছেলেকে রেখে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর আমি আরও বিস্তারিত জানাব।

এর আগে, মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, মাহরিন জানিয়েছে- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সে বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গা পুড়ে গেছে।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনাসদস্য বলেন, ম্যাডাম ভেতরে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে বের করে দিয়েছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেননি।

মাহরিনের উদ্ধার করা শিক্ষার্থীরা বলে, ম্যাডাম বারবার বলছিলেন, দৌঁড়াও, ভয় পেও না। আমি আছি।

প্রসঙ্গত, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটসহ ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এতে দগ্ধ হয়েছে আরও ১৭১ জন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই সময়ের সাথে সাথে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

two × one =

ট্যাগস :

নিজে ৮০ শতাংশ পুড়েও ২০ শিক্ষার্থীকে বাঁচালেন শিক্ষিকা মাহরিন

আপডেট সময় : ১২:৪৩:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

বিমান বিধ্বস্তের পর আগুনের মধ্যে ক্লাসরুমের ভেতর থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের একে একে বাইরে নিয়ে আসেন মাইলস্টোন কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী (৪২)। প্রায় ২০ শিক্ষার্থীকে বাইরে বের করে আনতে পারলেও নিজে সময়মতো বের হতে পারেননি। মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন তিনি।

সোমবারের (২১ জুলাই) এই ঘটনায় উদ্ধার করে তাকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান।

এরপর মাহরিন চৌধুরীর ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে লেখেন, মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন।

তিনি আরও লিখেছেন, মাইলস্টোনে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করতেন মাহরিন। আগুন লাগার পর তিনি প্রথমে বের হয়ে আসেননি, বরং যতজন শিক্ষার্থীকে সম্ভব বের করে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১০০ শতাংশ দগ্ধ হন। আজ আপনারা দয়া করে আমার প্রিয় বোনের জন্য দোয়া করবেন। তিনি তার দুই ছেলেকে রেখে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার পর আমি আরও বিস্তারিত জানাব।

এর আগে, মাহরিনের স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, মাহরিন জানিয়েছে- স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সে বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের সব জায়গা পুড়ে গেছে।

উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক সেনাসদস্য বলেন, ম্যাডাম ভেতরে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে বের করে দিয়েছেন, তারপর উনিই বের হতে পারেননি।

মাহরিনের উদ্ধার করা শিক্ষার্থীরা বলে, ম্যাডাম বারবার বলছিলেন, দৌঁড়াও, ভয় পেও না। আমি আছি।

প্রসঙ্গত, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটসহ ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এতে দগ্ধ হয়েছে আরও ১৭১ জন। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাই সময়ের সাথে সাথে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে।