ঢাকা ১২:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ

অপরাধ দৃষ্টি নিউজ
  • আপডেট সময় : ১২:০১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • / 6

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামে ১২টি এবং ফুলগাজীতে ৮টিসহ তিনটি নদীর তীরবর্তী অন্তত ২০টি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহুরী নদীর ১০টি, কহুয়া নদীর ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনের ফলে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বুধবার পর্যন্ত জেলার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৫৯৩টি পরিবারের ৫ হাজার ৭৭৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলাজুড়ে মোট ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে।

বন্যায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। বন্ধ হয়ে গেছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল। তবুও অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে যাতায়াত করছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। জেলাজুড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫৪৭ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক এবং চালু হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল ৪৪১ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে এবং নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, হালদা নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন বলেন, ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং নতুন করে বাঁধে ভাঙন হতে পারে। আবহাওয়া অফিসও সতর্ক করে জানিয়েছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ফেনীতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

5 − five =

ট্যাগস :

ফেনীতে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, আশ্রয়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ

আপডেট সময় : ১২:০১:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবল স্রোতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও তা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকালে জেলা প্রশাসন সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামে ১২টি এবং ফুলগাজীতে ৮টিসহ তিনটি নদীর তীরবর্তী অন্তত ২০টি বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহুরী নদীর ১০টি, কহুয়া নদীর ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনের ফলে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, বুধবার পর্যন্ত জেলার ৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৫৯৩টি পরিবারের ৫ হাজার ৭৭৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ১৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলাজুড়ে মোট ১৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু আছে।

বন্যায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। বন্ধ হয়ে গেছে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল। তবুও অনেক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে যাতায়াত করছেন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। জেলাজুড়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২ হাজার ৫৪৭ জন দক্ষ স্বেচ্ছাসেবক এবং চালু হয়েছে একটি কন্ট্রোল রুম।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ছিল ৪৪১ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত কমার সম্ভাবনা রয়েছে এবং নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, হালদা নদীর পানিও আগামী ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন বলেন, ভারতের ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আরও পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং নতুন করে বাঁধে ভাঙন হতে পারে। আবহাওয়া অফিসও সতর্ক করে জানিয়েছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ফেনীতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।